বাঙালি আর মাছ একে অপরের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে থাকলেও সবাই কিন্তু এই মাছের বাজারের গন্ধ টা সহ করতে সক্ষম নয়।
তবে একটি বিশেষ প্রাণী আছে যাকে প্রায় এখানেই ঘুর ঘুর করতে দেখা যায়, তারা সুযোগ খোঁজে নিজেদের আহার অর্জন করবার। এই খাদ্যের সংগ্রাম কিন্তু এদের মত প্রাণী দের জন্য সোজা পথ নয়, অনেক লড়াই করতে হয়, অনেক বাঁধা বিপ্পতি ও থাকে, সঙ্গে কিছুটা জীবনের ঝুঁকি বয়ে বেড়াতে হয়।
রুই , কাতলা, মৃগেল, ভেটকি, পোমফ্রেট, চিংড়ি, তালাপিয়া, চানা, বাটা, পাবদা, কৈ, তপসে, পুটি, বোয়াল, চিতল আরো যে কত রকমের মাছ বিক্রি হচ্ছে এই হরি পড়ার টিনের বাজারে। নিজের লেজ নাড়তে নাড়তে একবার দেখে নিচ্ছিল বুলটি।
-ওই দেখ টুনি আজ মনে হয় কাটা পোনা টা বেশ তাজা আর চিংড়ি টাও দেখতে মন্দ নয় বল?
টুনি এক মনে বাম দিকে তাকিয়ে রয়েছে লালটুর দোকানের দিকে, ইলিশ দেখে কি আর অন্য দিকে তাকানো যায় ,বুলটি কি বলছে ওর সেদিকে মন নেই...
- এই কিরে কিছু বল?
- ওইসব ছাড়, লালটুর দোকানে দেখ কি এনেছে আজকে
- উড়ি বাস! এই বর্ষার প্রথম ইলিশ
- হাঁ, কোনো স্পেশাল অর্ডার হয়তো, একটা ট্রাকে ইলিশ মাছ গুলো লোড করছিল, এটা খেয়াল করলো টুনি।
কিছুক্ষণের জন্য বুলটি ও চেয়ে তাকিয়ে থাকলো ইলিশের দিকে। শুধু দেখেই জানো মুখে স্বাদ অনুভব করছিল দুজনে। টিনের চালের ফুটো দিয়ে রোদ এসে পড়লো, একদম চক চক করছে ইলিশটা, সবার থেকে আলাদা।
এই সব দেখতে আর ভাবতে প্রায় বেলা বারোটা গড়িয়ে এলো, বুলটি খেয়াল করলো সবাই গুটিয়ে পটিয়ে নিজের মতন বাড়ির দিকে রওনা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
কাটা পোনা তো দূরের কথা, মাছের আঁশ টুকুও আর নেই, সবাই নিজের মতো জল দিয়ে দোকান পরিষ্কার করে ফেলেছে।
বুলটির মাথা বেশ গরম , গজ গজ করে টুনি দিকে দিকে তাকিয়ে বলল " আজ তোর ওই ঝাঁচকচকে ইলিশের জন্য এবালার খাবারটা কপালে জুটল না।"
মাথা নিচু করে টুনি বলল ঠিক বলেছিস সব আমার দোষ, কি যে মায়া জরালো ইলিশটার দিকে , আর মুখ ফেরাতে পারলাম না।
তখন প্রায় বেলা তিনটে, মাথার ওপর করা রোদ, পেটে খাবর নেই , তাও নিজেদের শরীর কে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে কোনো রকমে। বুলটি নাখে একটা চেনা গন্ধ ভেসে এলো , একবারের জন্য মনে হল ইলিশ, কিন্তু না আর না এবার ওই ইলিশের মায়া জালে পা দেবে না।
হঠাৎ কেউ পেছন থেকে বলছে " আয় আয় " , একটু থমকে দাড়ালো টুনি আর বুলটি। একটি মহিলা ইলিশের কাঁটা দিয়ে ভাত মেখে রাস্তার বেড়াল গুলোকে খাওয়াচ্ছে। তারা দুজন ও ছুটে যাই তার কাছে। এঁটো খাবারটা দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারল আজ ওদের বাড়িতে সরষে ইলিশ হয়েছিল।
বেশ তৃপ্তি করে খেলো ওরা দুজনে। খাওয়ার পর টুনি বলল " ইলিশের প্রতি আমাদের টান কতটা ছিল তা আমি জানি না, কিন্তু কিছুটা ইলিশের আমাদের প্রতি মায়া ছিল হয়তো , টাই আজ উপভোগ করতে পারলাম।"
এর পর দুই মেছো বিড়াল কোনো এক নতুন গন্তব্যে বেরিয়ে পড়ল, পরের দিনের টাও তো ভাবতে হবে তাদের...
- শতরূপা উপাধ্যায়
0 Comments