অনুমান


খন প্রায় রাত দুটো। আঁখি বাদে বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। চারদিক এত টাই শান্ত যে ঘড়ির কাঁটার আওয়াজ টাও সোনা যাচ্ছে।

আঁখি, নিজের মা, দিদুন আর ছোট ভাই সহ ভিলায় এ থাকে। ভিলায় ভারতের মধপূর্ব রাজ্য ছত্তিশগড়ের একটি শহর , যেটা ধাতুবিদ্যা প্রক্রিয়া জন্যেও বিখ্যাত। বাবা থাকে কলকাতায়ে, উনি ব্যাংক মানেজর।

চোখে ঘুম ঘুম ভাব , কিন্তু পড়া প্রায় অনেক টায় বাকি, দু দিন পরে পরীক্ষা। এই সময়, চোখ টা যখন খালি বোতলের দিকে পড়লো , জল ট্রেস্টা একটু আরো বাড়লো ।

ঘরের বাইরে যেতেই , বিল্ডিংয়ের সিঁড়ি দিয়ে একজনের ওঠার আওয়াজ পেলো আঁখি। দরজার কি হোল দিয়ে দেখলো সে। সামনের ফ্ল্যাট নম্বর ১এ, দরজায় একটি মহিলা দাঁড়িয়ে চাবি টা খোঁজার চেষ্টা করছে, খানিক্ষুন বাদে ঘরে চলে গেলেন। একটু অবাক হলো আঁখি অনেক দিন ধরেই  বন্দ ছিল এই ঘর টা।

জল টা নিয়ে ফিরে যাচ্ছিল , তখনই মনে হল একটু ফ্রিজ টা খুলে দেখল মন্দ হয়না। সামনেই কেসার রসমালাই রাখা - এটা দেখে কে বা এড়িয়ে যায়।

ঘরে ফিরে , ফ্যানের স্পিডটা একটু বাড়িয়ে , নিজের চেয়ারে বসলো। জল খাওয়ার পরেও মুখ থেকে এখনও কেসার রসমালাইয়ের স্বাদটা যায়নি।

ধুপকাঠির গন্ধে সকাল সকাল আঁখির ঘুম ভাঙ্গলো। কাশতে কাশতে নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে আসে, মায়ের কথা অনুযায়ী টেবিলের ওপর রাখা গরম জলটা খেয়ে, সে স্কুল যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করে ।

মিসেস দাস; হলেন আঁখির মা, তার সকালের ঠিকানা ওনার রান্নাঘর আর সেটা জুড়ে থাকে কিছুটা গল্প, ওনার প্রতিবেশী মিসেস গুপ্তার সাথে। সকাল বেলায় দরজার সামনে থেকে নিউজপেপার নিতে গিয়ে দেখলেন পাসের বারির ১এ সামনে গত ২-৩ দিনের নিউজপেপার ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। মনে মনে মিসেস দাস ভাবলেন “আজকাল কার মানুষ সময় মাফিক কোনো কাজ করতে চাইনা, লাইফ স্টাইল টাই পাল্টে যাচ্ছে ,না রাতে শোয়ার ঠিক থাকে না ঘুম থেকে ওঠার” ।

মৃদুল আঁখির ছোট ভাই, সে আজও নিজের স্কুলের হোমওয়ার্ক শেষ করেনি, রিতি মত সকাল সকাল বকুনি খাচ্ছে নিজের মায়ের থেকে। এই রকম সময় ম্রিদুলের একমাত্র আশ্রয় হল ওর দিদুন।

মৃদুল নিজের হোমওয়ার্ক না করার অজুহাতটা ঠিক এই ভাবে দিল " আমাকে ১ থেকে ৫০০ অবধি শব্দে লিখতে দেওয়া হয়েছিল , কতটা কঠিন কাজ একবার ভেবে দাখো, দিদির পড়া গুলো তো নিমেষে কম্পিউটারের সাহায্যে হয়ে যাই"।

ক্লাস ২ এ পড়া মৃদুলের কথা শুনে ওর মায়ের মাথায় হাত, কি বা বলবে ওকে, আর কি করেই বা বোঝাবে।

আঁখি স্কুল বাসে উঠে দাখে ওর রোজকার বসার সিট টাই আজ অন্য কেউ বসেছে, বুঝতেই পারলো যে ওর বন্ধু  রুচি আজ ওর জন্য সিটটা রাখেনি।

ভারী রেগে আছে রুচি আঁখির ওপর, কত বার করে রিকোয়েস্ট করেছিল ওর সাথে এই  গত সপ্তাহে একটি পুষ্প প্রদর্শনী মেলাতে যাওয়ার জন্য, কিন্তু আঁখি কিছু তেই রাজি হয়নি।

প্রত্যেক মাসের মতন আজ স্কুলে মেডিক্যাল চেকআপ চলছে, ঠিক এই সময় ডক্টর আঁখি কে জিজ্ঞেস করলেন "তোমার পল্লেন অ্যালার্জি জন্য কি তুমি নিয়মিত ওষুধ খাও?"

রুচি লাইনের পেছনেই দাঁড়িয়ে ছিল, তখন বুঝে ওঠে যে ও কিছু না ভেবেই ও আঁখির ওপর রাগ করে বসে ছিল। স্কুল থেকে সেদিন বাড়ি ফেরার পথে দুজন বাসে একসাথেই বসল আর সব রাগ অভিমান মিটে গাল ।

সেদিন মিসেস দাস অফিস থেকে ফিরে জানতে পারে ওনার সাসুরির খুব শরীর খারাপ হয়েছিল এমনিতেই হায়ি প্রেসারের ওনার । ঠিক এই সময় নিজের সাহায্যর হাতটা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন অনার প্রতিবেসি ফ্লাত নাম্বার ১এ তে থাকা নার্স টি।

সকাল বেলায় মিসেসস দাস কত কিছুই না ভেবে ছিলেন ওনার প্রতিবেসির ব্যাপারে , উনি যে একটি নার্স হতে পারেন আর কাজের সূত্রে বারি ফিরতে রাত হতেই পারে , এটা একবার ভেবে দাখেন্নি বা জানার চেষ্টাও করেননি।

অন্যের সমালোচনা করা বা নিজে থেকে অনুমান করে নেওয়ার স্বভাব ছোট থেকে বড় সবার মধ্যেই থাকে, কিন্তু কারোর ব্যাপারে কিছু ধারণা করার আগে আমাদের একটু ভেবে দেখা উচিত না ? সময়ের পরিবর্তনে হইত আমরাও উলট দিকের মানুষটার জায়গায় হতে পারি।  

 শতরূপা উপাধ্যায় 

 

  

 










Post a Comment

0 Comments