কল্পনার এক জায়গা

জ ১৫ জুন। ঠিক ৪ দিন পরেই গরমের ছুটি শেষ। আবার সেই স্কুল শুরু হবে। স্কুল খুললেই পরীক্ষা, এই ভেবেই দিন কাটছে মীমলির। মীমলির ভালো নাম চেতনা ঘোষ। মীমলির স্কুলের হোমওয়ার্ক প্রায় সব শেষ, খালি একটা জিনিস বাকি, স্কুল খুললেই সবাইকে নিজেদের কোনো কল্পনার এক জায়গার ব্যাপারে বলতে হবে। এটা এক ধরনের মৌখিক পরীক্ষা। বিষয়টা দিদিমণি আগেই জানিয়ে দিয়েছেন, যাতে সবাই নিজেদের মত করে প্রস্তুতি নিতে পারে। কিন্তু কী নিয়ে বলবে এটাই বুঝে উঠতে পারছে না মীমলি। কিছু না বুঝতে পেরে এক এক করে বাড়ির সবার মতামত নিতে শুরু করে সে। 

দিদুন বলল, এমন কোনো জায়গা যেখানে বাস্তব আর কল্পনার মিলন হয়। মা বলে, যেখানে বার বার ফিরে যাওয়ার ইচ্ছে থাকে। বাবা গম্ভীর হয়ে বলেন, এমন কোথাও যেখানে শেখার আর জানার কোনো শেষ নেই। ছোট্ট মৃদুলকে জিজ্ঞেস করে মীমলি, "ভাই তুই বল দেখি তুই কোথায় যেতে চাস?"
মৃদুল বলে, "আমি বিকেলে ফুটবল খেলতে যাব"। ওর কথা শুনে বাড়ির সবাই হেসে ওঠে।

অবশেষে মীমলি যায় রিতা মাসীর কাছে। রিতা মীমলির বাড়ির পরিচারিকা। প্রায় ১৬ বছর বয়স থেকেই কাজ করে সে। তার উত্তর শুনে মীমলি একটু অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু তারপর একটু চিন্তা ভাবনা করে দেখে এর থেকে ভালো জায়গা এই পৃথিবীতে আর কোথাও হতে পারে না। 

সময় গড়িয়ে যায়। আজ মীমলির মৌখিক পরীক্ষা।
"চেতনা ঘোষ" – দিদিমণি ডাকেন। একটু ভয় ভয় মীমলি এগিয়ে যায়। ক্লাসের ঠিক মাঝে দাঁড়িয়ে সে বলতে শুরু করে, "এই জায়গাটিতে বিশাল বড় এক বিল্ডিং, অনেকগুলো ঘর, আর তার সঙ্গে বসার জন্য চেয়ার টেবিল আছে। তার পাশেই খেলার একটা বিশাল মাঠ। ওখানে মা-বাবার মতো বকেন আর কিছু ভালো করলে প্রশংসা করেন এমন শিক্ষক শিক্ষিকা আছে। সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রচুর বন্ধু আছে আমার সেখানে। আমার প্রতি দিন সকালে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছেটা হয়ত তাদের জন্যই। আজ আমি সেখানেই দাঁড়িয়ে, এখানে প্রতিদিন আমি আসার সুযোগ পাই কিন্তু অনেকের কাছে এই সুযোগটাও থাকে না। ঠিক আমাদের বাড়ির রিতা মাসীর মত। অনেক সামাজিক কারণে সে আর কখনও স্কুলে ফিরে যেতে পারেনি। তবে, সে ভাবে একদিন ওখানে ফিরে যাবে। ছোটবেলার সব থেকে ভালো মুহূর্ত ওনার স্কুলে কাটানো দিনগুলি। সেই দিনগুলি স্বপ্নের থেকেও সুন্দর। আমার কল্পনার জায়গা আমার কাছে একটি বাস্তব আর সেটা হলো আমার স্কুল।"

মীমলির বলা শেষ হওয়ার পর, দিদিমনি এক গাল হাসি নিয়ে বলেন, "আজ চেতনা আমাদের মধ্যে একটি সামাজিক অবগতির দৃষ্টি দিয়েছে আর এটাও বুঝিয়েছে যে আমাদের বাস্তবটা আসলে কল্পনারই এক অংশ।"

- শতরূপা উপাধ্যায়




Post a Comment

0 Comments